একুশে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক উৎসব এবং বাংলা চর্চার ভবিষ্যত

অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন

  বিশেষ প্রতিনিধি    19-02-2023    194
একুশে ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক উৎসব এবং বাংলা চর্চার ভবিষ্যত

বাংলাদেশের আরেকটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব হলো একুশে ফেব্রুয়ারী, শহীদদিবস।ছাত্র—ছাত্রিরাই মুলত এই উৎসবে মেতে উঠে বেশী। এই উৎসবের ছোয়া লাগে সারাদেশে। আমাদের এদিককার ছাত্ররা এখন বড় আকােও কোনও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে কি? রাজনীতিইএখন একমাত্র সংস্কৃতি।

বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারী দিবসে আমি দেখেছি আপামর জনসাধারন মিছিল কেও শহীদ বেদীতে আসে ফুল দিতে। বাংলাভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে বাহান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারীতে চারজন তরতাজা তরুণ প্রাণ দিয়েছিল ঢাকায়। সেই অনুসােও এটি শোক দিবস হিসেবে পালিত হওয়ার কথা। কিন্তু এখন দেখা যায় সেটি জয় দিবস কিংবা ভবিষ্যত শপথ নেবার দিন। তবুও আজকেযাদেও বয়স একুশ কুড়ি তারাতো সেই বাহান্ন সাল দেখেননি। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেও স্মৃতিও তাদের মনে নেই, তবুও একুশে ফেব্রুয়ারী উৎসবের শোকের প্রাণাবেগ দেখে অভিভুত না হয়ে পারিনা। তখনকার দিনে উচ্চশিক্ষিত মুখ্যমন্ত্রী ফজলুল হক সাহেবও মাঝে মাঝে বাংলাবাক্য উচ্চারন করতেন। পাকিস্তান সৃস্টিও পর বাহান্ন সালের অনেক আগে কায়েদে আজম জিন্না একজন সভায় আব্বাস উদ্দিনের গান সম্পর্কে আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু তখন সাধারন মুসলমান শ্রোতারা জিন্নার বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও ঝড় তোলেছিল। শেষ পর্যন্ত আব্বাস উদ্দিনের গান দিয়েই জনসভা শুরু হয়েছিল। তাই বলে বাংলাদেশে কি ইঙ্গ—বঙ্গ সমাজ নেই? জিনসও গেঞ্জি পরা সবসময় ইংরেজী বলা ছেলে মেয়েদেও দল, বিদেশী মেগাজিন পড়া ব্রাউন সাহেবরা একুশে ফেব্রুয়ারীর তোয়াক্কা করেননা। বাংলা একুশে ফেব্রুয়ারী কবে, সে ধাঁধার উত্তর আমাদেও অনেক ছেলেমেয়েরা দিতে পারবেনা। কিন্তু বাংলা শিল্পসংস্কৃতির সাথে তাদেও সম্পর্ক একেবােও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি। তাই অনেককে বলতে শুনি পহেলা ফেব্রুয়ারী আসলে বাঙালি হয়ে যাই, আবার ২৮শে ফেব্রুয়ারী আসলে বাংলা ভুলে যাই। তবুওতো এই একটা মাস তারা বাঙালি সাজতে লজ্জা পায়না।

একুশে ফেব্রুয়ারীতে কবিতা নিয়ে অনেক অনুষ্টান দীর্ঘ দিন ধেও হচ্ছে এবং কবিতাকে ভালোবেসে বহু মানুষ রাজধানীতে নয়, মফস্বলে দুরগ্রামে অঞ্চলেও শুধু কবিতাকে ভালোবেসে তাঁদেও জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করছেন। অনেকটা সময় ধেও কবিতার সঙ্গে কাটাচ্ছেন। এটা জানলে বা বুঝলে ভালোলাগে, যেহেতু আমি কবিতা লিখি, যেহেতু আমি গান লিখি, গান গাই, গানের সুর করি সেজন্য বাংলা সঙ্কৃতির যে কোন বিষয় যখন দেখি যেখানে অনেক মানুষ ইনভল্ব হচ্ছেন, অনেক মানুষ জড়িয়ে থাকছেন তখন একটা কোথাও ভিতেও ভিতেও আনন্দ হয়। তবুও বিভিন্ন কবিতার অনুষ্ঠানে আসতে পেেও মনে মনে ভালোলাগে যে সত্যি ছেলেমেয়েরা তাদের পারফরমেন্স পেশাদার যারা শিল্পী তাদেও মতোই নিখুত হচ্ছিল। এটা সহজে হয়না। যারা এর পেছনে কাজ করছে তাঁদেও কৃতিত্ব অবশ্যই রয়েছে। আর ছোটছোটে ছলেমেয়েরা যখন কবিতা বলছে তখন তাদেও মুখের দিকে তাকিয়ে ওদেও বলবার মধ্যে যে আনন্দ সেটার দিকে তাকিয়ে অনেকগুলো কথা মাথায় এসেছে সেইগুলোই বলবো কিন্তু তার আগে দুয়েকটি কথা।

ভালোলাগছে যে এতো মানুষ দীর্ঘক্ষন ধেও বসে থাকেন বাংলাভাষায় যে কাজ হচ্ছে তা শোনার জন্য। আপনারা অনেকেই জানেন গুরুত্বেও বিচােও বা প্রয়োজনীয়তার বিচােও সারা পৃথীবির ৪১৭টি ভাষার মধ্যে রাস্ট্র সংঘ বাংলা ভাষাকে তৃতীয় স্থানে রেখেছে। আপনারা এটাও জানেন যে এই মুহুর্তে সারা বিশ্বে প্রায় ৩৬কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলেন, বাংলা পড়েন, বাংলা জানেন। আপনারা এটাও জানেন যে বাংলা এমন একটা ভাষা, অন্যভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে যেগুলো ব্যাবসায়ীক কারণে বানিজ্যিক কারনে ব্যবহার হয় যেমন ইংরেজী, জার্মানী বা ফ্রেঞ্চ কিন্তু সাহিত্য কাব্যেও বিচােও অন্য ভাষার মানুষ সবচেয়ে যে ভাষাটি বেশী শিখতে চায় সেখানেও বাংলাভাষার স্থান ২য়। আমার এইকথাগুলো বলার অর্থ বাংলাভাষা নিয়ে যারা চর্চা করছেন, বা দীর্ঘদিন ধরে করছেন, তাদেও প্রতি সাধুবাদ জানানো এবং এসব জানিয়ে দেওয়া, বিশেষ কেও এখানে অনেক অভিভাবক আছেন তাঁদের কাছে। যে এতো আনন্দ এবং এতো ভাললাগার মধ্যে কিছু খারাপ লাগা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আসলে বাংলা বাঙ্গালী এসব বললে কোথাও একটা এমন প্রেক্ষাপট তৈরী হয়, এমন একটা চালচিত্র তৈরী হয়, যেটা বোধ হয় পৃথীবির অন্য ভাষার মানুষ নিশ্চই তাদেও সংস্কৃতি নিয়ে তাদেও গর্ব আছে তাদেও সংস্কৃতি নিয়ে তাদেও অহংকার আছে, কিন্তু কোথাও যেন আমার মনে হয় বাংলাভাষা ছাড়া বোধ হয় সম্ভবনয়। একটা ভাষা যে ভাষায় কথা বলতেন স্বামী বিবেকানন্দ। একটা ভাষায় যে ভাষায় কথা বলতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম। একটা ভাষা যে ভাষায় দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচিত হয়েছে। একটা ভাষা যা এখনো পৃথীবির ৩৭কোটি মানুষ উচ্চারন করে। একটা ভাষা গোটা ভারতবর্ষেও স্বাধীনতা আন্দোলন কেমন্ত্রদিয়েছিলেনযিনি।সেইসাহিত্যসম্রাটবঙ্কীমচন্দ্রেরু বন্দেমাতরম”। সেই সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা ছিল বাংলা। প্রথম থেকে তিনি বাংলা জানতেন না এবং বেশী বয়সে এসে তিনি বাংলা শিখেছেন।

এবং নতুন ভাষার আবিস্কার করেছেন, নতুন ছন্দেও আবিস্কার করেছেন। সেই মাইকেল মধুসুধনদত্তের ভাষা বাংলা। যে বীর সন্যাসী অজও কস্ট স্বীকার করে এই বাংলার মাটি থেকে দুরুহ এক দীর্ঘযাত্রা শেষে পৗছেছিলেন চিকাগোয় এবং বিশ্ব ধর্ম মহাসম্মেলনে তোলে ধরেছিলেন ভারতবর্ষেও উজ্জল রুপে তাঁরো মাতৃভাষা বাংলা। স্বামী বিবেকানন্দের মাতৃভাষা বাংলা। সমস্ত পৃথিবীতে যে সাহিত্যকে চিরায়ত ধরা হয় বাংলা থেকে দুএকটি উদাহরন দিতে গেলে কথা অমৃতের না আসে। সেই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের ভাষা বাংলা।

এগুলো আমাদের গর্ব এগুলো আমাদেও অহংকার। বাংলাভাষায় যারা গান গেয়েছেন, বাংলাভাষায় যারা নাটক করেছেন, বাংলা সাহিত্যে যারা চর্চা করেছেন, বাংলার কবিতাকে যারা সমৃদ্দ করেছেন, তাঁদের কথা ভাবলে গর্বে অহংকারে, আনন্দে আমাদেও বুক ফুলে উঠে। কিন্তু যখন সামনের দিকে তাকাই যখন আমার পরবর্তী সময়টার দিকে তাকাই তখন দু:খ হয়। আমি দুয়েকটি ছোট অভিজ্ঞতা আপনাদেও সাথে ভাগ কেও নেবো তাইলে বুঝতে পারবেন কোথায় এসে দাড়াচ্ছি।

এইযে আজকে নানা কবিতার প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন ছেলেমেয়ে জড়ো হয়েছেন, এতোগুলি ছেলে এক জাগায় জড়ো হয়ে কবিতা বলছেন, আজ থেকে কুড়ি বছর বাদে এটা সম্ভব হবেনা। কারন এখন যারা ছাত্র এখন যারা পড়ছেন তারাতো অরণ্য দেব নয়, তারাতো অতদিন বেঁচে থাকবেন না। এদেও স্থলে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু যিনি দায়িত্ব নেবেন তিনিতো এখন ক্লাস ফাইব সিক্সে পড়েন। তার কাছ থেকে তো বাংলাটাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই গোটা দেশ যারা পরিচালনা করেন তারা এমন একটা ব্যবস্থা তৈরী করেছেন যে লেখাপড়ার নাম করে শুধু চাকর হওয়া যায়।

মুক্তমত-এর আরও খবর