শুধু ফেব্রুয়ারিতেই বাতি জ্বলে শহীদ আবদুস সালাম পাঠাগারে

  বিশেষ প্রতিনিধি    21-02-2024    60
শুধু ফেব্রুয়ারিতেই বাতি জ্বলে শহীদ আবদুস সালাম পাঠাগারে

বছরের বাকি সময় উপেক্ষিত থাকলেও ফেব্রুয়ারি এলেই কদর বাড়ে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সালাম নগরের। বছরজুড়ে অবহেলিত ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে নানা কর্মযজ্ঞে প্রাণ ফেরে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই গ্রামের নাম সালাম নগর করা হয়। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ সালামের বাড়ির অদূরে নির্মাণ করা হয় ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। ২০০৮ সালের ২৬ মে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় সেখানে পাঠকের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। বর্তমানে গ্রন্থাগারে ১১টি আলমারি, ৩ হাজার বই আর ছয়টি টেবিলের সঙ্গে কিছু চেয়ার রয়েছে। এছাড়া জাদুঘরে শহীদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।

স্থানীয় বাসিন্দা মেজবাউল হায়দার বলেন, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক বছরে এলাকার রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে স্মৃতি জাদুঘরে সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কিছুই নেই। এখানে এসে দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। গ্রন্থাগারের বইগুলোও বেশিরভাগ অনেক পুরোনো। নতুন নতুন বই দিয়ে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে অন্তত একদিন গ্রন্থাগার পরিদর্শনে আনা গেলে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে।

নুরুজ্জামান সুরুজ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, পাঠাগারে বই থাকলেও পাঠকের দেখা মেলে না। শহীদ দিবসে মানুষের আনাগোনা থাকে শুধু। এছাড়া সারাবছর গ্রন্থাগার ও জাদুঘরটি থাকে মানব শূন্য। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়াতে ও প্রচার প্রচারণার অভাবে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে খুব বেশি জানে না।

মোস্তাফিজ চৌধুরী নামে এক দর্শনার্থী বলেন, সালামের বাড়ির গ্রন্থাগারটি চেনার কোনো উপায় নেই। ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে যদি একটি তোরণ ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয় তাহলে মানুষ ভাষা শহীদ আব্দুস সালামের গ্রামের বাড়ি সহজে চিনতে পারবে।

রাফিউল চৌধুরী নামের কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ভাষা শহীদ সালামের বাড়ি ফেনীর সালাম নগরে শুনেছি। তবে কখনও যাওয়া হয়নি। সালামের জীবনী সম্পর্কে কোনো বই পাঠাগারে সংরক্ষিত রাখলে শিক্ষার্থীরা ফেনীর একজন ভাষা শহীদ সর্ম্পকে জানতে পারবে।

ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ইসতিয়াক হোসেন বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই গ্রন্থাগারে তিন হাজারের অধিক বই রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গ্রন্থাগারে ভাষার মাস আসলেই শুধু মানুষের আনাগোনা বাড়ে। গ্রন্থাগারটি জনসম্পৃক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ উদ্যোগ গ্রহণ করলে বইগুলো পড়ে নতুন প্রজন্ম ও সাধারণ মানুষ ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।

ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আখি রানী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটি ভাষা শহীদ সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামকরণ করা হলেও গেজেট না হওয়ায় কাগজে-কলমে এখনো লক্ষণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবেই রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি নামটি গেজেটভুক্ত করেন তাহলেই স্থায়ীভাবে সালামের নামে প্রতিষ্ঠানটি পরিচিত হবে।

শহীদ আবদুস সালামের ছোট ভাই সুবেদার (অব.) আবদুল করিম বলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই সবাই আমাদের খোঁজখবর নেয়। বাকি সময় অনেকটা নিভৃতে থাকতে হয়। সরকারিভাবে তার স্মৃতি চিহ্নগুলো ধরে রাখার উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা করব।

দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, গ্রন্থাগারে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক বা মাসিক পরিদর্শন করানো যায় কিনা সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া সেখানে ভূমি অধিগ্রহণ করে বিনোদন স্পট হিসেবে একটি শিশুপার্ক করা যায় কিনা সেই বিষয়ে পৌরসভার সাথে আলোচনা করা হবে।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল বশর মজুমদার তপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাষা শহীদ সালাম স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করে সেখানে পর্যটন এলাকা প্রতিষ্ঠা করা গেলে সালাম নগর সারাবছর প্রাণচঞ্চল থাকবে। জায়গাটি সর্বস্তরের মানুষের কাছে তুলে ধরতে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কে একটি তোরণ ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে। এছাড়া গ্রন্থাগারে নতুন নতুন বই দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামে জন্ম হয় আবদুস সালামের। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সালাম সবার বড় ছিল।

সারাদেশ-এর আরও খবর