কক্সবাজারে বহুমাত্রিক রূপ পাচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন

  বিশেষ প্রতিনিধি    29-03-2023    195
কক্সবাজারে বহুমাত্রিক রূপ পাচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন

কক্সবাজারে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন। নান্দনিক ডিজাইন আর নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি এর বহুমাত্রিক পরিধি নিয়ে গড়ে ওঠা এই স্টেশনই হতে পারে পর্যটকদের বিনোদনের নতুন গন্তব্য। ট্রেনে ওঠানামাসহ আরও থাকবে ১৭টি বাণিজ্যিক কার্যক্রম।

নতুন যুগের সূচনার অপেক্ষায় এখন পর্যটন নগরী কক্সবাজার। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেল যাবে এখন শুধু তার ক্ষণ গুনে অপেক্ষা। আক্ষরিক অর্থে ঝিনুক না হলেও সমুদ্র দর্শনে এসে প্রথম দর্শনেই যেন সামুদ্রিক একটা আবহ পাওয়া যায় গোটা স্টেশনে। কেবল আসা-যাওয়ার জন্যই হচ্ছে না এই স্টেশন, দেয়া হয়েছে বহুমাত্রিক রূপ।

সুবিশাল চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতলা থেকে নামতে হবে ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে। আর আসার যাত্রীরা বের হবেন নিচ থেকে। স্টেশনের ভেতরেই থাকবে কেনাকাটার ব্যবস্থা। থাকবে হলরুম। আবার চাইলেই নির্দিষ্ট লকারে ব্যাগ রেখে পর্যটকরা ঘুরে আসতে পারবেন পুরো শহর।

এই আইকনিক স্টেশনের স্থপতি মো. ফয়েজ উল্লাহ জানান, দিনের বেলা বাড়তি আলো ব্যবহার করতে হবে না এই স্টেশনে। ওপরের ছাদ খোলা থাকায় থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এর আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণেই কক্সবাজার রেলস্টেশনকে বলা হচ্ছে গ্রিন স্টেশন।

এই স্থপতি বলেন, ‘কক্সবাজার রেলস্টেশন ডিজাইন করার সময় একটা অনুপ্রেরণা নিই। ঝিনুক ও শামুকের গঠনটা বাহিরে থাকে, আর বাকি শরীরের অংশটুকু ভেতরে আবৃত থাকে। আমরা সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পুরো রেলস্টেশনটাকে একটা ছাউনি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।’

মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘এখন রেলস্টেশন শুধু যাত্রী যাওয়া-আসার জন্য নয়। এখানে আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে টেকসই করার জন্য নানা ধরনের ব্যবহারকে সংমিশ্রণ করা হয়। পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা, রেস্টুরেন্ট, ফুডকোর্ট, মাল্টিপারপাস হল, হোটেল থাকবে। সুতরাং এটি শুধু রেলস্টেশন নয়; এটি একটা ডেস্টিনেশন। এটা একটা আকর্ষণীয় আর্থসামাজিক মডেল।’

তিনি বলেন, ‘চারদিকে গ্লাস লাগানো হচ্ছে। এখানে কোনো কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ছাউনিটা পুরো কাঠামোটাকে ঢেকে রেখেছে। ফলে সবসময় ভবনটি সহনীয় তাপমাত্রায় থাকবে। এতে কুলিং লোড কম হবে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের লোডও কম হবে। এতে এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই প্রকল্পটি পরিবেশগতভাবে টেকসই হিসেবে ডিজাইন করা। এখানে বৃষ্টির পানি থেকে শুরু করে পানি পুনর্ব্যবহার করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থকাবে। এ ছাড়া পুনর্ব্যবহৃত টেকসই উপাদান ব্যবহার করছি। পানির জন্য কম অপচয় ওয়াটার ফিক্সচার ব্যবহার করছি। নানা রকম সুযোগ-সুবিধা আছে এখানে। বলা যায়, এই বিল্ডিংটা একটা পরিপূর্ণ গ্রিন বিল্ডিং।’

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্টেশন নির্মাণের অগ্রগতি ৮৫ ভাগ। নির্ধারিত সময়ের আগেই চলতি বছরে এই পর্যটন নগরে ট্রেনের বাণিজ্যিক যাত্রার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এর প্রকল্প পরিচালক।

দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘দুটি লটে আমরা কাজ করছি। লট-১-এ আমরা একটু পিছিয়ে আছি। লট-১ শুরু করেছিলাম পরে। কারণ, আমরা প্রথমে কক্সবাজারে জমি পেয়েছিলাম। এপাশ আশা করছি জুনের মধ্যে শেষ করতে পারব। বাকিটা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে। তাহলে অক্টোবর-নভেম্বরে ট্রেন চালাতে পারব বলে আশা করছি।’

প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে চকরিয়া ৫০ কিলোমিটার ও পরের ধাপে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার ৫০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নব্বই ভাগের বেশি।

সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

সারাদেশ-এর আরও খবর