কক্সবাজারে ডেসটিনি’র পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের হাট

  বিশেষ প্রতিনিধি    21-03-2023    203
কক্সবাজারে ডেসটিনি’র পরিত্যক্ত ভবনে মাদকের হাট

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনি’র পরিত্যক্ত ভবনটি অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিনত হয়েছে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের অবাধ বেচাকেনা, চলে সেবনের নিয়মিত আসর। ভ্রাম্যমাণ পতিতা ব্যবসাও চলে সেখানে। জুয়া খেলারও নিরাপদ আস্তানা ভবনটি। শুধু তাই নয়, অপহরণ করে নিয়ে আটকে চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটে। এমন হরেকরকম অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে ভবনটি।

জানা গেছে, এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনি যখন সারা দেশে একচেটিয়া ব্যবসা করছিল, তখন প্রতিষ্ঠানটি সুগন্ধা পয়েন্টে এই হোটেলটি গড়ে তোলে। পরে ২০১২ সালে ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে হোটেলটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। এরপর থেকেই এটি একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সুযোগে একশ্রেণির সংঘবদ্ধ অপরাধী সিন্ডিকেট অপরাধকান্ডে নানাভাবে পরিত্যক্ত স্থাপনাটিকে ব্যবহার করছে। এছাড়া অনেকে সেখানে নানা ব্যবসা বাণিজ্যও খুলে বসেছে।

আশপাশের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১৫/২০ জনের একটি সিন্ডিকেট পরিত্যক্ত ভবন টি নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা বৈধ ব্যবসার গোডাউনের আড়ালে সেখানে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ। তারা আরও জানিয়েছেন, পরিত্যক্ত ভবনটির বিভিন্ন কক্ষ ভাড়া দিয়েও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, দুই/একজন বীচকর্মী নেপথ্যে সিন্ডিকেটটিকে সহযোগিতা দিয়ে থাকে।

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্র সুগন্ধা পয়েন্টে ডেসটিনির পরিত্যাক্ত ভবনে বসছে মাদকের হাট। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদক বেচাকেনা। এই হাটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ সব ধরনের মাদক। পাশাপাশি মাদক সেবীদের আড্ডার স্থান হিসেবেও বেশ পরিচিত ভবনটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সুগন্ধা পয়েন্টে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ১০ তলা বিশিষ্ট ওই ভবনটি। ভবনের বিভিন্ন তলায় প্রবেশ করলে দেখা যায় বিভিন্ন রুমে বসেছে মাদকের আসর। একই তলায় আরও দুটি রুমে দেখা যায় কয়েকজন মাদকসেবীকে। তারা তখনও মাদক সেবন করছেন। কয়েকটি কক্ষে জুয়া খেলতেও দেখা যায়।

জানা গেছে, জাফর আলম নামের এক ব্যক্তি পরিত্যক্ত এ হোটেলের প্রতি কক্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে ৫-৭ হাজার টাকা করে ভাড়া দেন। এছাড়া মাদক ব্যবসার লাভের টাকার নির্দিষ্ট পরিমাণের একটি ভাগও পান তিনি।

সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের নিয়মিত অভিযানে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা গ্রেফতার হলেও অজানা এক কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় ভবনটি। এছাড়া শহরের অপরাধীদের একটি চক্র ভবনটিতে আশ্রয় নিয়ে থাকে।

ছিনতাইকারীরা শহর জুড়ে ছিনতাই করে ওই ভবনটিতে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। সুগন্ধা সৈকতের পাশে এমন মাদকের আখড়ার ফলে পর্যটকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পর্যটকদের ব্যাগ টানা পার্টি বা কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতের সঙ্গেও জড়িত ওইসব মাদকসেবীরা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম “সকালের কক্সবাজার”কে বলেন, ‘এ বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক অভিযোগ আসছে, দ্রুত খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

বিষয়টি জানানো হলে কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো.জিল্লুর রহমান এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে জানান।

পরে যোগাযোগ করা হলে টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিন আলম বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনে অপরাধীদের খোঁজ খবর নিয়ে অভিযান চালানো হবে।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নানা অভিযোগ আসছে, এটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে’।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এটি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সারাদেশ-এর আরও খবর