ধর্ষণের মামলায় ফের আসামি হয়ে কারাগারে পল্টন

  বিশেষ প্রতিনিধি    06-03-2023    162
ধর্ষণের মামলায় ফের আসামি হয়ে কারাগারে পল্টন

বিয়ের প্রলোভনে শিক্ষানবীশ এক নারী আইনজীবীকে ধর্ষণের ঘটনায় আইনজীবী পল্টন দাশকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

গত রোববার চট্টগ্রাম চতুর্থ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন। ২০ ফেব্রুয়ারি পল্টন দাশকে অভিযুক্ত করে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় চার্জশিট দেন কোতোয়ালি থানার এসআই মেহেদী হাসান। এতে সাতজনকে সাক্ষী করা হয়। আজ চার্জশিট গ্রহণের শুনানির দিন ধার্য ছিল।

বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহিন সুলতানা হীরা বলেন, আজ চার্জশিট বিষয়ে শুনানির দিন আসামিপক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। কিন্তু আদালত নামঞ্জুর করে পল্টন দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এ স্থানান্তর করেন।

এসময় শুনানিতে সহায়তা করেন আইনজীবী মানিক দত্ত, অর্পিতা দত্ত ও নিতাই ঘোষ।

সরেজমিন দেখা যায়, আজ সকালে আইনজীবীর পোশাক পড়ে অভিযুক্ত পল্টন দাশ আদালতে হাজির হন। এরপর শুনানি শেষে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় পল্টন দাশের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ নিতে ওই নারী পল্টনের কাছে যেতেন। এর সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তা প্রেমে রুপান্তরিত হয়।

পরে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে তাদের প্রেমের সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়। ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালতের দোয়েল ভবনের সপ্তম তলার ৭১৮ নম্বর কক্ষসহ নগরের বিভিন্ন হোটেলে তাদের মধ্যে বহুবার শারীরিক সম্পর্ক হয়।

একপর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি পল্টনকে জানালে তিনি গর্ভপাত করতে বলেন। এমনকি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই নারীকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী আইনজীবী বলেন, আমার অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি পল্টনকে জানালে সে আজ-কাল- পরশু মন্দিরে নিয়ে বিয়ের কথা বলে কালক্ষেপণ করেন। গর্ভের সন্তান বড় হওয়ায় সামাজিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছিল। ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় এ বিষয়ে তার পরিবারকে জানাই। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। পল্টনের বাবা মামলা করতে বলেন।

তিনি বলেন, এছাড়া ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকার সময় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতিতে পল্টনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। তারাও সমাধান দিতে ব্যর্থ হন। উল্টো সিনিয়র নেতাদের কয়েকজন ভিন্ন কৌশলে আমাকে কুপ্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচার চালান পল্টনের মামাতো ভাই প্রকৃতি চৌধুরী ছোটন। একটি অনলাইন পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে ভুয়া সংবাদও প্রচার করেন তিনি। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির গ্রুপেও আমাকে খারাপভাবে উপস্থাপন করেন।

তিনি আরও বলেন, প্রকৃতি চৌধুরী ছোটন আমাকে ফোন করে জানতে চান কত টাকা পেলে আমি গর্ভের সন্তান নষ্ট করব? তার কথা পাত্তা না দেওয়ায় তিনি আমাকে নিয়ে ঘৃণিত কাজ করেছেন। এছাড়া তাদের বন্ধু বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ ও সাবেকুন নাহার তারিনও আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, পল্টন হুমকি দিয়ে বলতো- সে আইনজীবী। তার বাবাও আইনজীবী। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। তাদের এমন ভয়-ভীতি ও হুমকির কারণে আইনি ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এছাড়া আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে তোলা কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় পল্টন। এছাড়াও পল্টনের বাবা বঙ্কিম দাশ ও বড় ভাই নিউটন দাশ নানা ধরনের কথাবার্তা বলে সমাধান এড়িয়ে মামলায় জিততে পারলে দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেন।

জানা যায়, ২০২১ সালের ৬ জুন নগরের কোতোয়ালি থানায় পল্টনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১) ধারায় মামলা করি। এ মামলায় ১০ জুন বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। পরদিন অর্থাৎ ১১ জুন পল্টনকে কারাগারে পাঠান চট্টগ্রামের একটি আদালত।

এদিকে ডিএনএ টেস্ট করে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত পল্টনকে জামিন দোন আদালত। গ্রেপ্তারের ১৩ দিন পর ২৩ জুন তিনি জামিনে মুক্তি পান।

চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় ওই নারীর ডিএনএ টেস্ট করা হয়নি। এতে মা ও সন্তান উভয়ের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।

গর্ভজাত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আড়াই মাস বয়সে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় রাজধানীর ঢাকা মেডিকেলের ন্যাশনাল ফরেন্সিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরীজের প্রধান মোহাম্মদ জাবেদুল আলম খোন্দকার ও ডিএনএ বিশ্লেষক আবু সুফিয়ান পল্টন দাশ শিশুটির জৈবিক পিতা বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেন।

সারাদেশ-এর আরও খবর