গর্ভ ভাড়া দেয়া শুধুই প্রথা নয়, ব্যবসাও বটে

  বিশেষ প্রতিনিধি    07-10-2022    223
গর্ভ ভাড়া দেয়া শুধুই প্রথা নয়, ব্যবসাও বটে

বাড়িঘর ভাড়া দেওয়ার মতোই বিশ্বজুড়ে রয়েছে গর্ভ ভাড়া দেওয়ার একটি প্রথা। বলতে গেলে বিশ্বজুড়ে এটি একটি নতুন ব্যবসা। গর্ভ ভাড়ার এই প্রকৃয়াকে বলা হয় ‘সারোগেসি’। মা হওয়ার এই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন একাধিক নারী। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়েই সারোগেসি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সারোগেসি শব্দের অর্থ হল গর্ভাশয় ভাড়া। একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে ‘সারোগেসি’ বলে। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিতে নারীদেহ থেকে ডিম্বাণু ও পুরুষ দেহ থেকে শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্টটিউবে নিষিক্ত করে তা সারোগেট নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। সারোগেসি ব্যবস্থা তখনই একটি দম্পতি করতে পারে যখন কোনো স্ত্রী গর্ভধারণে অক্ষম হয়। এসব কারণেই সারোগেসি রূপ নিয়েছে একটি আধুনিক প্রজনন ব্যবস্থায়। শারীরিক গঠন ঠিক রাখা এবং মাতৃত্বকালীন কষ্ট এড়াতেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল মানুষের মধ্যে সারোগেসি এখন আর অপ্রচলিত নেই। অন্যদিকে বন্ধ্যাত্বের বাধা পেরিয়ে মাতৃত্বের স্বাদ পেতেও ভরসা সারোগেসি। সারোগেসি দুটি পদ্ধতি করা হয়। একটি হচ্ছে প্রথাগত সারোগেসি এবং অন্যটি হচ্ছে আধুনিক সারোগেসি। প্রথাগত সারোগেসিতে সারোগেটের ডিম্বাণু যৌনমিলনের মাধ্যমে পিতার বা দাতার শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। আর ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়ায় আধুনিক সারগেসি হয়। প্রথম ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে এটি সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রযুক্তির দ্বারা সৃষ্ট একটি ভ্রূণ একটি সারোগেটে রোপণ করা হয়। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও বহুদিন ধরেই প্রচলিত সারোগেসি। সারোগেসি পদ্ধতিতে মা হয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। গত ২৩ জানুয়ারি মাঝরাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি জানান, সারোগেসির মাধ্যমে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। প্রিয়াঙ্কার আগে প্রীতি জিনতা, শিল্পা শেঠি, শাহরুখ খান, আমির খানের মত বড় মাপের বলিউড তারকারা এই পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে বাবা-মা হয়েছেন। গত বছর বলিউডে মুক্তিপ্রাপ্ত কৃতি স্যানন অভিনীত ‘মিমি’সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে রাজস্থানের একটি শহরে রীতিমতো জিনিস কেনার মতো করে পছন্দ করা হচ্ছে মেয়েদের। কিন্তু কেন? কারণ পছন্দসই মেয়ে মিললেই চড়া দামে তাদের গর্ভ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কাস্টমারদের ধরেই এই ব্যবসা চালানো হচ্ছে এবং বহু বিদেশি দম্পতি শুধুমাত্র এভাবে সন্তানের জন্ম দিতেই সেখানে আসছেন। সিনেমার পুরো গল্পকে কাল্পনিক বলে মনে হলেও সম্প্রতি এই সিনেমার গল্প একদমই বাস্তব সময়ের সাথে মিলে যায়। ইন্ডিয়া টাইমসের এ প্রতিবেদনে সূত্র বলছে, শুধু ভারতেই নয় বিদেশেও সমানভাবে জনপ্রিয় এই ব্যবসা। তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইউক্রেন। গত কয়েক বছরে বাবা-মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় থাকা অনেকেই ইউক্রেন যাচ্ছেন এবং সেখানে ইতোমধ্যেই বৈধতা পেয়েছে সারোগেসির মাধ্যমে মা হওয়ার নিয়ম। ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈধ হওয়ার পরে প্রতি বছর ইউক্রেনে কয়েক হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে এই পদ্ধতিতে। মূলত এই কারণেই সেখানে ক্রমশ শিশু জন্মদানের হার বেড়েই চলেছে। ঐ গবেষণায় যে সমস্ত তথ্য সামনে এসেছে তা চোখ কপালে ওঠার মতো। জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকেই ভারত, নেপাল ও ইউক্রেনের মতো একাধিক দেশে সারোগেসির সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে সরকারও সম্প্রতি এই বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইউক্রেনে বছরে দুই থেকে আড়াই হাজার শিশুর জন্ম হয় শুধুমাত্র সারোগেসির মাধ্যমে। এই কাজে যে নারীদের ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র। মূলত টাকা উপার্জনের জন্যই তারা তাদের গর্ভ ভাড়া দেন। অন্যদিকে টাকার লোভে কোনো কোনো নারী একাধিকবার সারোগেট মা হতেও রাজি হন। এতে তাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতিও হচ্ছে। গর্ভবতী অবস্থায় তাদের যেখানে রাখা হয় সেই ঘরগুলোও খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। ফলে এই সমস্ত দেশের নারীদের নানা শারীরিক সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্যবসাতেও রয়েছে একাধিক দালাল। তারাই মূলত এই দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এক্ষেত্রে যে সমস্ত মহিলারা তাদের গর্ভ ভাড়া দেন তাদের টাকার একাংশ নিয়ে থাকেন ওই দালালরা।

মুক্তমত-এর আরও খবর