ফ্লাই ডাইনিং : মধ্য আকাশে আপ্যায়িত হওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি

  বিশেষ প্রতিনিধি    29-08-2022    168
ফ্লাই ডাইনিং : মধ্য আকাশে আপ্যায়িত হওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি

আকাশে ঝুলছে রেস্তোরাঁ। তাতে বসেই দেখা যায় সাগরের ঢেউ, দূরের পাহাড় আর সমুদ্রের বুকে সূর্যাস্ত। এসব নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখার পাশাপাশি রসনাবিলাসেও আছে নানা আয়োজন। এ সুযোগ তৈরি হয়েছে পর্যটননগরী কক্সবাজারে। সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে ফ্লাই ডাইনিং নামের ঝুলন্ত রেস্তোরাঁ। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এই ঝুলন্ত রেস্তোরাঁ বদলে দেবে কক্সবাজারের পর্যটনের আবহ। সংশ্লিষ্টরা জানালেন, অত্যাধুনিক ক্রেনের সাহায্যে সৈকতের ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬০ ফুট উঁচুতে উঠে যায় এই দৃষ্টিনন্দন রেঁস্তোরা। সেখানে বসে আকাশ থেকেই উপভোগ করা যায় সৈকতের সৌন্দর্য ও আশপাশের পাহাড়ের রূপ। ২৪ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন রেস্টুরেন্টটি আকাশে চতুর্দিক ঘুরতে ঘুরতে ক্রেতাদের খাবার পরিবেশন করে। এ যেন মেঘের রাজ্যে বসে আপ্যায়িত হওয়ার রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আমেরিকা প্রবাসী পর্যটন উদ্যোক্তা আল জুবায়ের মানিক বলেন, কক্সবাজারে এমন অনেক পর্যটক আসেন যাদের খরচ করার মতো জায়গা নেই। শুধু হোটেল রুমে থাকাটাই তাদের জন্য বড় ব্যয়। তারা আসেন বিনোদনের জন্য। আমি মনে করি ফ্লাই ডাইনিং তাদের জন্য অনেক বড় উপহার হবে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে রেস্তোরাঁটি। বসার পর্যাপ্ত স্থান রেখে চালু করা হয়েছে এটি। রেস্তোরাঁর পশ্চিম পাশে খালি স্থানে বসানো হয়েছে একটি ক্রেন। একটি বিশেষ পাটাতনে ২৪ জন ধারণ ক্ষমতার চেয়ার, টেবিল ও ওপরে ছাতার মতো এক ধরনের ছাদ তৈরি করে চারপাশ খোলা রাখা হয়েছে। অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ তার ক্রেনের মাথায় লাগিয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে পাটাতন। রান্নাঘরে পছন্দমতো খাবার অর্ডার করলে পরিবেশন করবেন রেস্তোরাঁ কর্মীরা। প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম পরিচালক দিব্যা পাঠক জানালেন, এই ধরনের রেস্তোরাঁ বাংলাদেশে এটিই প্রথম। এটি নির্মাণ করেছে ভারতের প্রসিদ্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইউর ট্রাভেলস লিমিটেড। এ রেস্তোরাঁয় খাবারসহ জনপ্রতি খরচ পড়বে সর্বনি চার হাজার থেকে সাড়ে আট হাজার টাকা। পাটাতনে ওঠা, আকাশে উড্ডয়ন এবং অবস্থান ও নেমে আসার সময়সহ প্যাকেজের সময়সীমা এক ঘণ্টা। রান্নাবান্না ও যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন বিখ্যাত রন্ধনশিল্পী টনি খান। তিনি বলেন, কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে অনেক পর্যটক আসেন। এখানে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আছে। এখানে হোটেল অনেক আছে, রেস্টুরেন্ট অনেক আছে। কিভাবে অন্য জিনিস কক্সবাজারে নিয়ে আসা যায়, যাতে কক্সবাজারকে মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে তুলনা করতে পারে- সেই চিন্তা থেকেই মূলত ফ্লাই ডাইনিং। জার্মানি, ফ্রান্স প্যারিস, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ পৃথিবীর ৫০টি দেশে এটি বর্তমানে চালু আছে। মানুষ সেখানে উপভোগ করছে। মধ্য আকাশে খাবার গ্রহন করার অনুভূতিই আলাদা। ফ্লাই ডাইনিং রেস্টুরেন্টের কর্ণধার (ভারতীয় নাগরিক) নবাব ফয়েজ আবু বক্কর খান জানান, ফ্লাই ডাইনিং বেশ কয়েকবছর ধরে বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশে চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটিই প্রথম। জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি এই ফ্লাই ডাইনিং নিরাপদ ও পরীক্ষিত বলে জানান তিনি। কক্সবাজার দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হলেও এখানে বিনোদনের তেমন কোনো মাধ্যম নেই। এখাতে প্রতি বছর দেশ বিদেশের প্রচুর পর্যটক ভ্রমণে আসেন। তাদের বিনোদনে এই ফ্লাই ডাইনিং রেস্টুরেন্ট নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের।

পর্যটন-এর আরও খবর