আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত ইখলাস

  বিশেষ প্রতিনিধি    16-10-2022    205
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত ইখলাস

আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অসীম ক্ষমতাধর প্রভু তিনি। তিনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। তাঁর ক্ষমতার পরিমাপ করা সম্ভব নয় কারো পক্ষে। তিনি পরম পরাক্রমশালী। অপারগতা তাঁর সত্তা থেকে বহুদূরে। সকল কিছুই তাঁর জন্যে সম্ভব। আল্লাহতাআলা অসীম ক্ষমতার গুণগুলোকে পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ২৫৫নং আয়াতে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন। যার অর্থ: ‘আল্লাহ; তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সদা বর্তমান। তাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর। এমন কে আছে যে, তাঁর অনুমতি ব্যতিত তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারে? মানুষের অতীত ও ভবিষ্যত সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবগত। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তা ব্যতিত তাঁর জ্ঞানের কিছুই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর আসন আসমান এবং জমিন পরিব্যপ্ত। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে আদৌ ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, তিনি মহামহিম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৫৫) আল্লাহতায়ালা মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। আমরা যা কিছু করবো একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য করবো। পবিত্র কোরআন ও রাসূল (সা.)-এর হাদিস থেকে জানা যায়, আমরা যে ইবাদতই করি না কেন, তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো ইখলাস। ইখলাসবিহীন কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সুফিরা মনে করেন, ইখলাসবিহীন আমলই বান্দার জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইবাদতসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদনের নামই ইখলাস। কে আমাকে দেখছে, আর কে দেখছে না সেটা না ভেবে ‘আল্লাহ সর্বক্ষণ আমাকে দেখছেন’ এই ভয় ও ভাবনা মাথায় রেখে ইবাদত করার নাম ইখলাস। প্রখ্যাত সুফি ও দার্শনিক ইমাম গাজালী (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘কিমিয়ায়ে সাআদাতে’ লিখেছেন, ‘ইখলাস সকল আমলের মূল। কোনো বান্দা যদি তার সমস্ত জীবনে সামান্য মুহূর্তও আল্লাহর জন্য খালেসভাবে অতিবাহিত করে, তবে তা বান্দার জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা পার্থিব যে কোনো মোহ ও সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণের যাবতীয় লোভ থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহপাকের জন্য সমর্পিত আত্মার সামান্য আমলও ইখলাসের কারণে অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে।’ ইখলাসের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হজরত আবু উসমান (রহ.) বলেছেন, নিজের প্রতি মহান আল্লাহর সার্বক্ষণিক দৃষ্টির কথা স্মরণ রেখে সৃষ্ট জীবের সমুদয় কৃত্রিমতা ভুলে যাওয়ার নাম ইখলাস। ইখলাসের ব্যাপারে আরও সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিখ্যাত সুফি ফুজাইল (রহ.)। তিনি বলেন, মানুষের কারণে আমল ছেড়ে দেয়ার নাম রিয়া। আর মানুষের জন্য আমল করার নাম শিরক। কিন্তু এ দুটো থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহর জন্য আমল করাই হচ্ছে ইখলাস। হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঈমানকে খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ঠ হবে।’ বায়হাকি, শোয়াবুল ইমান : ৬৪৪৩ বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেছেন, ‘আমলে ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা থাকলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য অনেক আমলের দরকার নেই। ইখলাস থাকলে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য অল্প আমলই যথেষ্ঠ।’ সব ইবাদতের একমাত্র লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাই ইখলাসবিহীন কোনো ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহতায়ালা নবীদেরও ইখলাসের আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (নবীদের) এ ছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর ইবাদত করবে।’ সুরা বাইয়্যিনাহ : ৫ ইখলাস হলো কর্মকে মাখলুক বা সৃষ্টির পর্যবেক্ষণ থেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। সুতরাং আপনি যখন ইবাদতে একমাত্র আল্লাহকেই একক দ্রষ্টা ও লক্ষ্য ঠিক করবেন এবং খালেক বা স্রষ্টার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে মানুষের দৃষ্টির কথা একেবারে ভুলে যাবেন তখনই কেবল আপনার ইখলাস বাস্তব রূপ লাভ করবে। ইমাম বুখারী তদীয় সহীহ গ্রন্থে ঈমান অধ্যায়ে উল্লেখ করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘আমল (কবুল হবে) নিয়ত অনুযায়ী। প্রত্যেকে তাই পাবে যা সে নিয়ত করবে। অতএব যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে বলে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের আশায় কিংবা কোনো নারীকে বিয়ের অভিপ্রায়ে, তবে তার হিজরত যাকে উদ্দেশ্য করে তার জন্যই গণ্য হবে। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ আমাদের ইখলাসের সঙ্গে একনিষ্ঠ হয়ে ইবাদতে মগ্ন হওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে সূরা বাইয়েনাতের ৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তাদের এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।’ রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের শরীর এবং আকৃতির দিকে লক্ষ্য করেন না। বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টি দেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই প্রতিটি আমল বা কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ নিয়তে সত্যবাদিতা ও ইখলাসের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিস বর্ণনা করেন এবং তিনি আমলের ভিত্তি এ দুটিকেই নির্ধারণ করেন। যেমন- ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল, প্রতিটি মানুষ যা নিয়ত করে, সে তাই পাবে। হাদিসটি রাসূলের হাদিসসমূহ হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস। কারণ, শরয়ী বিধানের জন্য এটি একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক হাদিস। যাবতীয় সব ইবাদত এরই অন্তর্ভুক্ত, কোন ইবাদত এ হাদিসের বাহিরে নয়। যেমন- সালাত, সাওম, জিহাদ, হজ ও সদকা ইত্যাদি সব ইবাদত বিশুদ্ধ নিয়ত ও ইখলাসের মুখাপেক্ষী। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যখনই কোন বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ আরশ পর্যন্ত খুলে দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহ না করবে। “আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন তার ছায়া তলে ছায়া দেবেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। এক- ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ। দুই- যে যুবক তার যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছেন, তিন- ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত। চার- ঐ দুই ব্যক্তি যারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসেন, তারই ভিত্তিতে একত্র হন এবং তারই ভিত্তিতে পৃথক হন। পাঁচ- ঐ ব্যক্তি যাকে কোন সুন্দর ও বংশীয় যুবতী মহিলা অপকর্মের প্রতি আহ্বান করলে, সে বলে আমি আল্লাহকে ভয় করি। ছয়- ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ রাহে এত গোপনে দান করে, তার বাম হাত টের পায় না, ডান হাত কি দান করল। সাত- ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করল এবং তার চোখ থেকে অশ্রু নির্গত হল। হজরত আবু উমামা আল বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা শুধু ওই আমল কবুল করবেন, যে আমল কেবল আল্লাহর জন্য করা হবে এবং আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা উদ্দেশ্য হবে।’ নাসায়ি : ৩১৪০ হজরত সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো খরচ করবে, তার ওপর তোমাকে সওয়াব দেওয়া হবে।’ সহিহ্ বোখারি : ৫৬ ইখলাসের কিছু নিদর্শন আছে বলে আলেমরা উল্লেখ করেছেন। ইখলাসওয়ালা বান্দাকে মুখলিস বলা হয়। তারা প্রসিদ্ধি লাভ, প্রশংসা কুড়ানো ও গুণাগুণ করাকে পছন্দ করেন না, তারা দ্বীনের জন্য আমল করতে পছন্দ করেন, নেক আমলের প্রতিযোগিতা করেন, আমলের বিনিময় একমাত্র আল্লাহর কাছে চান। তারা ধৈর্যধারণ করেন, কোনো প্রকার অভিযোগ পছন্দ করেন না। এই শ্রেণির লোক তাদের আমলকে গোপন রাখতে পছন্দ করেন, গোপনে আমল করেন এবং তাদের অধিকাংশ আমল হয় লোক চক্ষুর আড়ালে। তাদের গোপন আমলের সংখ্যা অধিক হয় প্রকাশ্য আমল থেকে। এসবই হলো একজন মানুষের মধ্যে ইখলাস থাকার নিদর্শন। আমরা যখন কোনো ইবাদত করবো আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য করবো। যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়ে থাকে, সে ইলমকে যদি কোন ব্যক্তি দুনিয়াবি কোন উদ্দেশ্যে শেখে, কিয়ামতের দিন সে জান্নাত পাবে না, এমনকি সুঘ্রাণও পাবে না। এ প্রসঙ্গে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, তিনি হলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন, তারপর তাকে ডাকা হবে এবং তার নিকট তার নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে সে তা চিনতে পারবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি এ সব নিয়ামতের মুকাবিলায় কি আমল করেছিলে? সে বলবে, তোমার রাহে আমি যুদ্ধ করেছি এবং শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি যুদ্ধ করেছিলে, যাতে মানুষ তোমাকে বাহাদুর বলে। তা তোমাকে বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এক ব্যক্তি ইলম অর্জন করল, মানুষকে শেখাল এবং কুরআন পড়ল। তারপর তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হবে এবং তার উপর আল্লাহর নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে, সে তা চিনতে পাবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি এ বিষয়ে কি আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি ইলম শিখেছি এবং শিখিয়েছি। তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি ইলম শিখেছ, যাতে তোমাকে আলেম বলা হয়। আর কুরআন তিলাওয়াত করেছ, যাতে তোমাকে এ কথা বলা হয়, লোকটি ক্বারি। আর দুনিয়াতে তোমাকে তা বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য নিয়তকে খাঁটি বানানো জরুরি। কেননা নফস পছন্দ করে নেতৃত্ব, প্রশংসা ও প্রদর্শনী। ধাবিত হয় কর্মহীনতা ও অলস্যের প্রতি। আর তার জন্য সুসজ্জিত করা হয়েছে যাবতীয় লালসা ও বাসনাকে। এ জন্যই বলা হয়েছে, নিয়তকে খাঁটি বানানো কর্ম সম্পাদনকারীর জন্য কর্ম সম্পাদনের চেয়েও কঠিনতর। কেউ কেউ বলেন, ‘এক মুহূর্তের ইখলাস চিরকালের মুক্তি। কিন্তু ইখলাস বড় কঠিন’। কেউ কেউ নিজের আত্মাকে সম্বোধন করে বলতেন, ‘তুমি ইখলাস অর্জন করো তবে খালাস (মুক্তি) পেয়ে যাবে’। আরো বলা হয়েছে, ‘ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যার একটি পদক্ষেপ সঠিক হয়েছে যেখানে সে একমাত্র আল্লাহকে খুশি করতে চেয়েছে’। জ্ঞান অন্বেষণকারীর কর্তব্য হলো, আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ইলম তলবে নিজের নিয়তকে সুন্দর বানাবে, ইখলাস রচনা করবে এবং তাওহীদকে খাঁটি বানাবে। সুতরাং যে ইলম অন্বেষণে নিজের নিয়তকে খাঁটি করবে এবং এ পথে কষ্ট-সহিষ্ণুতার মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে, তাকে অবশ্যই দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। তাহলে সে এর মাধ্যমে তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার যোগ্য হয়ে উঠবে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহপাক তোমাদের শরীর ও অবয়বের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে লক্ষ্য করেন।’ (মুসলিম শরিফ, ২৫৬৪) ইখলাস বিহীন আমলের পরিণতি সম্বন্ধে আল্লাহপাক কোরআন করিমে বলেন; আমি ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য তারা যেসব আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণা করে দেব। (সুরাহ ফুরকান:২৩) ঈমানদার ব্যক্তির উচিত নিজের নিয়তকে খাঁটি বানানো, অন্তরকে রিয়া তথা লোক দেখানোর মানসিকতা থেকে মুক্ত করা এবং মনোযোগ কেবল দেয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতি। তাহলে ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করতে পারবে। ইখলাসহীন ইবাদত আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। ইসলামে এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর জন্য ইখলাস বেশি প্রয়োজন। না হলে ওইসব ইবাদত পরকালে কোনো কাজে আসবে না। বিশেষ করে সৃষ্টির সেবা, সুন্দর আচরণ, মানবতা, সহানুভূতি ও দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব রক্ষার মতো আমলের ক্ষেত্রে। বর্তমান উম্মতে মুসলিমাহ নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছে, এই সংকট থেকে পরিত্রাণ, মুক্তি ও সংশোধনের জন্য ইখলাসওয়ালা আমল বেশি প্রয়োজন।

ধর্ম ও জীবন-এর আরও খবর