পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু

  বিশেষ প্রতিনিধি    22-05-2023    106
পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু

কোনো সংকট না থাকলেও সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুন হয়ে যায়। ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৈঠক করাসহ বিভিন্ন উপায়ে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজের দাম কমানোর অনুরোধ জানায়। এ আহ্বানে সাড়া না দিলে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে হুঁশিয়ার করা হয় ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এ অনুরোধে তারা কান না দেওয়ায় অবশেষে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।

জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে দু-একদিনের মধ্যে স্পষ্ট ঘোষণা আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

গতকাল এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির কারণে শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গেল রোজার পর থেকে বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঈদের আগে যে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেটা এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় ক্ষুব্ধ হয়ে বেশ কয়েকবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি পেঁয়াজের দাম না কমে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানি করবে। তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় এবার সেই পথেই হাঁটছে সরকার।

সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায়, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।’

অন্যদিকে বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

গতকাল রাজধানীর বাড্ডায় একটি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হয়েছে। কিন্তু বেশি মুনাফা লাভের আশায় পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে, তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করে তারা এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’

টিপু মুনশি আরও বলেন, ‘দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য মূলত ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু ভোক্তাদের বাজারে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।’

আমদানির পর বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে কিনা, সে বিষয়ে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত না। পেঁয়াজ আমদানি করা হলে ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে। পেঁয়াজের দামের বিষয়টি মনিটরিং করছি। আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছি। তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, দাম বাড়বে এমন আশায় অনেকেই পেঁয়াজ ঘরে রেখে দিচ্ছেন।’

গত চার থেকে পাঁচ দিন ধরে বাজার বোঝার চেষ্টা করছেন জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাজারে কী হচ্ছে, তা দেখছি। পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি তো কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। সেই তুলনায় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দাম অনেক কম। সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারকে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে পারি, যুক্তিসঙ্গত একটা দামের মধ্যে নিয়ে আসতে পারি।’

গত বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি মজুতও ভালো ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরে অনেক পেঁয়াজ পচে গেছে। মূলত অনেক আড়ৎদার দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজ মজুত করেছিলেন, যা পরে নষ্ট হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়েছে এ বছরের পেঁয়াজ আবাদে।

গত বছর পচে যাওয়ায় এবং দাম কমে যাওয়ায় এবার পেঁয়াজের আবাদও কম হয়েছে। -ঢাকাটাইমস

জাতীয়-এর আরও খবর