রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আদৌ কি শুরু হবে?

  বিশেষ প্রতিনিধি    17-04-2023    98
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আদৌ কি শুরু হবে?

প্রত্যাবাসন সেন্টার প্রস্তুতের নির্দেশনা

বহু কাঙ্খিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন; তবে কি শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা যাচাই-বাছাইয়ের পর নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে প্রত্যাবাসন ইস্যুটি। এরই মধ্যে প্রত্যাবাসন সেন্টার প্রস্তুতের জন্য নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে ফেরত নিতে রোহিঙ্গাদের আস্থায় নেয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

কক্সবাজারের টেকনাফ আশ্রয় শিবিরে বসবাস করা রোহিঙ্গা ছৈয়দ হোসেন বলেন, কোন ছলচাতুরী নয়; সম্পূর্ণ নাগরিক সুবিধা দিয়ে ফেরাতে হবে। স্বদেশ মিয়ানমারে এমনভাবে ফেরাতে হবে যেখানে থাকতে হবে অবাধে চলাফেরা করার স্বাধীনতা।

আরেক রোহিঙ্গা হোসেন জোহার বলেন, স্বদেশে ফেরাতে হলে মিয়ানমারকে প্রথমে আমাদেরকে রোহিঙ্গা হিসেবে নাগরিকত্ব দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, জায়গা-জমি ও সম্পদ কেড়ে নিয়েছিল সেগুলো ফেরত দিতে হবে এবং নিজ ভিটে-মাটিতেই বাড়িঘর নির্মাণ করে দিতে হবে। তৃতীয়ত, মিয়ানমারের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষ যেভাবে অবাধে চলাফেরা করতে পারে সেভাবে রোহিঙ্গাদেরকেও চলাফেরার সুযোগ দিতে হবে। চতুর্থত, মিয়ানমারের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য লেখাপড়া করতে বাধা নেই, ঠিক তেমনি রোহিঙ্গাদেরকেও এই সুযোগ দিতে হবে। আর পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশি যাওয়ারও সুযোগ দিতে হবে।

সম্প্রতি টেকনাফ এসে ৪৮০ জন রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাই করেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। এরপরই নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি। তবে রোহিঙ্গারা বলছেন, সম্পূর্ণ নাগরিক সুবিধা নিয়েই স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান তারা।

তবে ফেরত নিতে হলে রোহিঙ্গাদের আস্থায় নেয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের বলে মন্তব্য করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার জানালেন, বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ মধ্যস্থতা ও সহযোগিতা করবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মোট প্যাকেজটা ছিল ১১৪০ জন রোহিঙ্গা। কিন্তু আমরা ১১৪০ জনে স্থির থাকতে চাই না। আমরা বলেছি, এরই মধ্যে মিয়ানমার ৮২ হাজার রোহিঙ্গার যাছাই-বাছাই করেছে, সেখানে ২০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের কোন ধরণের ত্রুটি নেই। আমরা প্রথম পর্যায়ে তাদেরকেও মিয়ানমার পাঠাতে চাই। কথা হচ্ছে, যারা যাবে তাদেরকে আস্থায় নিতে হবে। এই আস্থায় নেয়ার দায়িত্বটা কিন্তু দু’পক্ষের। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমার সরকারের। সেখানে আমরা শুধুমাত্র মধ্যস্থতা করতে পারি, আমরা সেটাই করছি।

এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাবাসন সেন্টার মেরামত ও নতুন প্রত্যাবাসন সেন্টার নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়কে। আর পাইলট বা বিচ্ছিন্ন কোন প্রত্যাবাসন নয়, টেকসহ প্রত্যাবাসনের কথা বার বার বলা হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একটি সভায় মিলিত হয়েছি। আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তারমধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার রাজি হয়েছে এই প্রত্যাবাসন প্রথম পর্যায়ে হবে। এর পরবর্তীতে কারা যাবে, তারপর কারা যাবে। তার মানে হচ্ছে; এটা একমাত্র পাইলট প্রজেক্ট হবে না, এটি পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে এবং সর্বশেষ ব্যক্তি কোন দিন যাবে সেটিও নির্ধারিত হতে হবে।

মো. মিজানুর রহমান আরও বলেন, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দেখতে পাচ্ছি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তাদের স্বদিচ্ছা রয়েছে। এখন তাদের প্রতিনিধি দল ফিরে যাওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করছি, পরবর্তীতে তাদের প্রতিক্রিয়া কি। এরপর দু’পক্ষের যে কমিটিগুলো রয়েছে তাদের মিটিং হবে। মিটিং হলে হয় তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারিত হবে এবং এই প্রত্যাবাসন নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রস্তুতি চলছে। আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছি। আর আমাদের যে প্রত্যাবাসন সেন্টারগুলো রয়েছে সেগুলো মেরামত এবং নতুন প্রত্যাবাসন সেন্টার তৈরির জন্য বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। যার কাজও চলছে।

এদিকে ক্যাম্পে কর্মরত বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ কর্তারা বলছেন; রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের কিছুটা অনীহা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) এর চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। এই ছোট রাষ্ট্রে ১২ লাখ রোহিঙ্গার যে বাড়তি চাপ তা সবাই দেখছে। যদি আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাহলে মিয়ানমার তাদের নাগরিক ফিরিয়ে নিতে কাজ করবে। কিন্তু সেই চাপের জায়গায় দেখছি আন্তর্জাতিক মহলের খুব একটা মাথা ব্যথ্যা নেই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এক প্রকার অনীহা রয়েছে তাদের।

২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি সই করেছিল। কিন্তু গত প্রায় ছয় বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সারাদেশ-এর আরও খবর