যা হবার হবে: দেশে ফিরবাে

সালাহউদ্দিন আহমেদ

  বিশেষ প্রতিনিধি    02-03-2023    210
যা হবার হবে: দেশে ফিরবাে

ভারতের শিলংয়ের জজ কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (১ মার্চ) আলাপকালে তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চান। সালাহউদ্দিন আহমেদের বেকসুর খালাসের খবরে বিএনপির নানা পর্যায়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত, স্থায়ী কমিটির বিগত বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমেদ অংশগ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ ৭ বছর পর দলের কোনও পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি না থাকলেও গত প্রায় এক মাস ধরে অনেকটাই নাটকীয়ভাবে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুক্ত হচ্ছেন তিনি।

দীর্ঘ সাত বছর বিএনপির পক্ষ থেকে জোরালোভাবে সালাহউদ্দিনের মুক্তি নিয়ে দৃশ্যমান কোনও প্রচেষ্টা দেখা না গেলেও হঠাৎ করেই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তার অংশগ্রহণের বিষয়টিতে অনেকেই কৌতূহলী হয়েছেন। বিশেষভাবে দলে সক্রিয় হওয়ার মাসখানেকের মধ্যে ভারতের আদালতে বেকসুর খালাসের বিষয়টি নিয়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারাও অন্ধকারে রয়েছেন। কারও কারও মতে, এর পেছনে রহস্য আছে! তবে ঠিক কী রহস্য, তা নিয়ে কোনও নেতা মন্তব্য করেননি।

তবে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ইস্যুকৃত প্রেস রিলিজে যদিও সালাহউদ্দিনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক এমপি, দলের কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘আমরা ওনার (সালাহউদ্দিন আহমেদ) বেকসুর খালাসের খবরে আনন্দিত, খুশি। তবে তিনি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন— এমন কোনও খবর আমি পাইনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ফরেন রিলেশন্স কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদকে মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হয়েছিল, ভারতের আদালতের রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন।’

২০১৫ সালের ১১ মে থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে আছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। আর তার আগের দুই মাস দেশের ভেতরেই ‘নিখোঁজ’ ছিলেন। ২০১৫ সালের মার্চে যখন সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন, ওই সময়ে বিএনপি পুরোদমে আন্দোলনে। অনেকটাই গেরিলা উপায়ে দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছিলেন তখন সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরিবারের অভিযোগ, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ গভীর রাতে রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কে ৪৯/বি নম্বর বাড়ির ২/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সালাহউদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

২০১৫ সালে ভারতে আটকের সময়ে সালাহউদ্দিন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তার অনুপস্থিতিতেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা দাবি করেছেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদের ইস্যুটি ভারত সরকার উদ্যোগী হয়েই শেষ করতে চেয়েছে। করোনাকালীন সময়ের পরপরই ভারতের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বিএনপির একাধিক নেতাকে জানিয়েছিলেন, ডিও প্রসেসেই সালাহউদ্দিনের বিষয়টি এগোবে।’

বিএনপির প্রভাবশালী একাধিক নেতা বুধবার রাতে জানিয়েছেন, গত এক মাস ধরে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগ্রহেই তিনি বৈঠকে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি করেন দুজন নেতা।

বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

বিএনপির নির্ভরযোগ্য একজন দায়িত্বশীল উল্লেখ করেন, সালাহউদ্দিনের বেকসুর খালাসের পর বিএনপির মূল পর্যবেক্ষণ এখন সরকারের আচরণ। সরকার কী ভূমিকা পালন করে, তা বিবেচনায় নিচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব। তবে, দেশে ফেরার পর তাকে কোনও মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কোনও বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের চিন্তা নেই বলে মনে করেন এই দায়িত্বশীল।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদের মামলাগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি আমার জানা নেই। তবে কোনও মামলা থাকলে সরকার কতটা উদারতা দেখাতে পারবে, সেটা স্পষ্ট নয়। আর তিনি নিজেই আইনে পারদর্শী একজন রাজনৈতিক নেতা। তিনি এসে কোর্টে আত্মসমর্পণ করবেন কিনা, সেটা তিনি না আসার আগ পর্যন্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

‘আমার প্রায়োরিটি এখন দেশে ফেরা। যত শিগগিরই সম্ভব দেশে ফিরতে চাই।’ বুধবার বিকালে আলাপকালে এভাবেই বলছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।

সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে একজন আইনজীবী জানান, দেশে ফেরার পর যদি কোনও মামলায় সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা ইস্যু না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি স্বাভাবিকভাবে জীবন করবেন। আর যদি থেকে থাকে, তাহলে আদালতে সারেন্ডার করতে হবে বা জামিন নিতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার-৩ আসনের বিএনপির সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল উল্লেখ করেন, আমরা এখনও বসিনি, জেলা কমিটিসহ সবাই মিলে বসে ঠিক করবো, কীভাবে তার আগমনী অনুষ্ঠান হবে। এখনও জানি না, তিনি কবে ফিরবেন।

জাতীয়-এর আরও খবর