সীমান্তের ৭ চৌকি পুনঃরুদ্ধারে মরিয়া মিয়ানমার বাহিনী

  বিশেষ প্রতিনিধি    23-10-2022    154
সীমান্তের ৭ চৌকি পুনঃরুদ্ধারে মরিয়া মিয়ানমার বাহিনী

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের আমতলীমাঠসহ ৭ টি সীমান্ত চৌকি পূনঃদখলে নিতে মরিয়া মিয়ানমারের সরকারী বাহিনী। শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে সীমান্তের ৪৩ থেকে ৫০ নম্বর পিলার এলাকার এ পার থেকে তা লক্ষ্য করা হয়।

এ লক্ষ্যে শুক্রবার রাতভর সেই চৌকি গুলো ঘিরে রেখে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকে চৌকি দখলে থাকা বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে। অবরুদ্ধ বিদ্রোহী (আরকান আর্মি নয়) গোষ্ঠীর যোদ্ধারা এখনো অবরুদ্ধ। এভাবে ৭ টি চৌকির অন্ততঃ ৫ শত বিদ্রোহীকে ঘিরে রেখেছে সরকারী বাহিনী। এতে হতাহতের খবর পেলেও সে বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছে না কেউ।

সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে এ দখল-পূনঃদখল নিয়ে এ গোলাগুলির ঘটনা চলছে সেই সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা এ সংবাদ লেখা অবধি। এ গোলাগুলি থেকে বেশ ক’টি গুলি বাংলাদেশের ভূখন্ডে পড়লেও গণমাধ্যম কর্মীরা বৃষ্টির মতো গুলির এ পরিস্থিতিতে এ সবের তুলতে যেতে পারছে না। অপরদিকে গোলাগুলির ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করছেন নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন। তিনি জানান, গুলিতে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছেন তিনি সহ ২ গণমাধ্যমকর্মী। বিকেলে তিনি এলাকা সীমান্তের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসা লোকজনের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে হঠাৎ মিয়ানমার থেকে একে-৪৭ রাইফেলের কয়েকটি গুলি চেরারমাঠের ইলিয়াছ ও ইউনুসের ধান ক্ষেতে পড়ে। তখন অসংখ্য আতংকগ্রস্থ মানুষ জড়ো হয়। যাদের অনেকের পরিবার তখন বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে চলে গেছেন। বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তিনি আরো জানান, এর আগে সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর সাথে অন্য একটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠির মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয় আমতলী মাঠ নামক এলাকায় মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর একটি চৌকিতে। যেটি দীর্ঘ দেড় মাস ধরে বিদ্রোহীদের দখলে ছিলো। তারা সরকারী বাহিনীকে হটিয়ে তা দখল করে। তার ধারণা মিয়ানমার সেনারা শক্তিসঞ্চয় করে এ ক্যাম্পগুলো পূনঃরুদ্ধারের জন্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘঠায় তারা।

তিনি আরো জানান, হঠাৎ সীমান্তের এ অংশে গোলগুলির আওয়াজ শুনে মানুষ আতংগ্রস্থ হয়ে পড়ে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসছে নিরাপদে। এ জন্যে তাদেরকে জরুরী সেবা দেয়ার জন্যে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। যেটি স্থানীয় চাকঢালা জুনিয়র হাইস্কুলে। তিনি বলেন, সেখানে খাবারের ব্যবস্থাও করেছেন উপজেলা প্রশাসন। তার মতে, গোলাগুলির ঘটনায় কয়েক গ্রামের ২ শতাধিক মানুষ পালিয়ে এসেছে। আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৪ পিলার নিকটবর্তী আবদুর রহমান, মোহামাদ হাশেম ও সাহাব মিয়া জানান, যেন অরাজক পরিস্থিতি। শনিবার ২২ অক্টোবর) সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে প্রথম একে -৪৭ রাইফেলস এর ১ টি গুলির আওয়াজ শুনেন তারা। বেলা ১২ টা থেকে বৃষ্টির মতো ভারী অস্ত্রের গুলির আওয়াজ তাদেরকে তটস্থ করে তুলে। শিশু ও নারীরা দ্বিকবিদিক পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে নিরাপদ দূরত্বে স্বজনদের বাসা বাড়িতে।

তারা আরো বলেন, প্রথমে তারা বাড়ি না ছাড়লেও বেলা ২ টার পর সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম থেকে লোকজন নিজেদের গরু-ছাগল নিয়ে পালিয়ে এসেছে আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে লোকজন আশ্রয় নিচ্ছে।

৪৫ নম্বর পিলার এলাকার ইউপি মেম্বার ছাবের আহমদ জানান, তার এলাকা সহ ৭ সীমান্ত চৌকি পূণঃদখলে নিতে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। ৫০ নম্বর পিলারের বাসিন্দা ডাঃ আবদুল মান্নান জানান, দুপুরে অনেক গোলাগুলি হয়েছে মিয়ানমান সীমান্ত চৌকির দিকে। সেখানে কিছু একটা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আতংকিত কিছু লোক সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসার খবর পেয়ে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে লোকজনকে শিবিরে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করছেন তারা। চেয়ারম্যান, মেম্বার, গ্রাম পুলিশ ও চৌকিদার-দফাদারদের নিবিড়ভাবে এসব দেখার জন্যে বলা হয়েছে। তিনি নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।

১১ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর ফোন রিসিভ হয় নি। তবে বিজিবির একটি সূত্র দাবী করেন, তারা সব কিছু অবজারভেশনে আছে। সতর্ক রয়েছেন তারা। তাদের টহলও জোরদার করা হয়েছে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

সারাদেশ-এর আরও খবর