মুন্সীগঞ্জে শুষ্ক মৌসুমে ভাঙছে পদ্মা, আতঙ্কে নদী তীরের মানুষ

  বিশেষ প্রতিনিধি    09-12-2024    51
মুন্সীগঞ্জে শুষ্ক মৌসুমে ভাঙছে পদ্মা, আতঙ্কে নদী তীরের মানুষ

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর ঢেউ আর প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙনের মুখে পড়েছে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের কৃষি জমি ও বসতভিটা।

শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লৌহজং উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে কুমারভোগ, হলদিয়া, কনকসার,লৌহজং-তেউটিয়া, বেজগাঁও, গাঁওদিয়া, কলমা ইউনিয়নগুলোর নদী তীরবর্তী গ্রামের কৃষি জমি ও বসতভিটা নদীতে ভাঙছে। এসব ভাঙনের শিকার মানুষগুলো স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গিয়ে ভাঙ্গনের বিষয়ে জানালে কিছু বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হচ্ছে । ভাঙ্গন কবলিত বেশ কিছু এলাকায় স্থায়ী বাধেঁর জন্য বরাদ্ধ হলেও বাধ নির্মাণের ধীরগতির কারনে ভাঙন চলছে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ দ্রুত নির্মাণের দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

স্থাণীয়ভাবে জানা গেছে বিগত দুই যুগের অধিক সময় ধরে ভাঙ্গনে লৌহজংয়ে বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি ও বসতভিটা। ছোট হচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। ভাঙনকবলিত এলাকার বেশ কিছু অংশে স্থায়ী বাধ নির্মাণ কাজ চললেও বাধ তৈরির ধীরগতি চলায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নির্মাণাধীন বাঁধের কাজের মেয়াদ গত সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হলেও এখনো দৃশ্যমান হয়নি বাধ।

গত বছরও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামে ২০/২৫টি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। অনেকে বাবা দাদার বসত ভিটা রেখে সরে গেছেন নিরাপদ স্থানে। সর্বনাশা পদ্মার ছোবলে প্রতিবছরই আঘাত হানছে আড়াই লাখ জনসংখ্যার বসবাসরত এই উপজেলার মানচিত্রে। দিনে দিনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে লৌহজংয়ের মানচিত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ বছর বর্ষার শুরুতে তেমন না ভাঙলেও বর্ষার পানি কমার সাথে সাথে গত কয়েক মাস যাবত উপজেলা নদীর তীরবর্তী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কমবেশি ভাঙন হচ্ছে। দিনে -রাতে পাড় ঘেঁষে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচল করায় উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এসব এলাকায় ভাঙন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী স্বামীহারা আনোয়ারা বেগম বলেন, “এহন আমরা কই যামু, যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নাই। এই আশি বছর বয়সে তিনবার সর্বনাশা পদ্মার ভাঙনের মুখে পরে নিঃস্ব হয়া গেছি।”

লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বড় নওপাড়া গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কখন পদ্মায় গিলে খায় সে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীর পাড়ের মানুষ।

গাঁওদিয়া ইউনিয়ন এর মো. আইনউজ্জদিন জানান, “বর্ষার পানি এই মুহূর্তে নেমে গেছে। তবে পানির গতিবেগ আমার বাড়ির পাশে এসে আঘাত আনায় মাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমার বাড়ির পাশের অনেক অংশ কৃষি জমি এবং বসতবাড়ির অংশ ভেঙে গেছে গত কয়েক দিনে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করেছি তারা আশ্বস্ত করেছেন যে জিও ব্যাগ ফেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

এলাকাবাসী আরো জানান,এর আগে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।এখন বর্ষা মৌসুম নেই এখন বেড়িবাঁধ এর কাজ করার উত্তম সময় তবে দ্রুতগতিতে করতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তথ্য অনুসারে ৩২ কোটি টাকার সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় ২৫০ কেজি ওজনের প্রায় ৮ লাখ বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। এরপর বালু ও সিমেন্ট মিশ্রিত আরোও ২ লাখ বস্তা ফেলা হবে পদ্মা সেতুর বাম তীরে।

মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, আপৎকালীন এ সময়ে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গণ প্রতিরোধের চেষ্টা করছি।

এদিকে লৌহজংয়ের খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ির দিঘীর পাড় পর্যন্ত ৯.১০ কিলোমিটারের দীর্ঘ এলাকায় পদ্মা ভাঙন রোধে সরকার প্রায় ৪শ’ ৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে গত বছরের এপ্রিল থেকে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল । এই কাজ ধীর গতিতে এগুচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়দের দাবি পদ্মা তীর ঘেঁষে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে একদিকে লৌহজংয়ের মানচিত্র ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে অন্যদিকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাবে।এতে করে খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের উৎস হিসেবে এই বেড়িবাঁধ কাজে লাগবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, “সরকার কর্তৃক সীমিত বরাদ্দের মধ্যে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে তীর রক্ষা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘোড়দৌড় বাজার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে স্রোত ডাইভার্ট করা হয়েছে,ভাংগন কমেছে, গাঁওদিয়া এলাকায় চর পড়েছে। জিও ব্যাগ ফেলার জন্য আরও নতুন বরাদ্দ পাওয়া যাবে দ্রুতই। স্থায়ী বাধ নির্মাণের জন্য ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় আছে।”

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “আমি নিজে ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। ওই এলাকায় বাধ নির্মাণ কাজ চলছে। ভাঙন রোধে আমরা জিএ ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছি। আগামীতে ওই এলাকায় আরো বৃহৎভাবে স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা হবে।”

সারাদেশ-এর আরও খবর